আবার আরেকটি উজ্জল নক্ষত্র হারিয়ে গেল না ফেরার দেশে !!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র এবং ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ কে গত বুধবার রাতে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছে | অপরাধ অনলাইনে ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে লেখালিখি |
খুনের স্টাইল আগের মতই | হত্যার সময় বারবার “আল্লাহুআকবার” বলে আনন্দ উল্লাস | সরকার , পুলিশ , প্রশাসন সবার প্রতিক্রিয়াও আগের মতই আছে | সরকার নিশ্চুপ , পুলিশ হত্যাকারীদের খোজার বদলে তদন্তের নামে মৃতের লেখালিখি ঘেটে দোষ বের করার চেষ্টায় ব্যাস্ত | মোল্লারা সবাই মিলে মৃত্যুর উল্লাসে আত্নহারা | আর সাধারণ পাবলিক তো পাবলিকই | নিজে বাচলে বাপের নাম , কে কই মরলো তা জেনে তাদের কী দরকার | বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী , সহকর্মীরা কিছুদিন রাস্তায় নেমে বিচারের দাবি | অতঃপর পুলিশের তদন্ত নামক ডুমুরের ফল ধরার অপেক্ষায় একসময় সবকিছু স্বাভাবিক এবং হত্যার ঘটনা পুরনো ইস্যুতে পরিণত হবে | এভাবেই তো চলছে সব | নিরপরাধ মানুষ হত্যারই বিচার হয় না , আর ব্লগার হত্যার বিচার কী হবে ! ব্লগাররা তো মানুষই না , তাদের অপরাধের তো শেষই নেই | লেখালিখির মত বড় অপরাধ আর কী হতে পারে !!
সবই আগের মতই থাকলেও শুধু একটা বিষয়ে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করছি | দেশের বড় বড় অনলাইন নিউজ পেপারগুলো হত্যার বিষয়ে তেমন কোন খবরই প্রচার করছে না | কিছু সাইটে অতি সাধারণ এক হেডলাইন দিয়ে হত্যার কথা প্রকাশ করা হচ্ছে কিংবা কোথাও আবার শুধু বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খবর প্রচার করেই খালাস | সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে চারিদিকে যেন ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার এক বিশাল নীলনকশা তৈরি হচ্ছে |
সরকার ও প্রশাসনের এমন নিস্তব্ধতা কি নিসন্দেহে হত্যাকারীদের শক্তি যোগাচ্ছে না ? পুলিশ তদন্ত করে তেমন কিছুই খুজে পায় না | অথচ হত্যার হুমকি সহ পোষ্ট দিব্যি আমাদের আশেপাশে ঘুড়ে বেড়ায় | আমরা হত্যার হুমকি সহ হুমকিদাতার খোজ পেয়ে যাই , অথচ পুলিশ কিছু খুজে পায় না | আর পাবেই বা কী করে ! সরিষা দিয়ে ভূত তাড়াবো , সরিষার মাঝেই যদি ভূত থাকে তাহলে আর কী করার !! যাদের ঘাড়ে তদন্তের ভার , তারাও তো এক একজন মহা আস্তিক | মৃত্যুর উল্লাস তো তাদের জন্যও প্রযোজ্য | তাছাড়া একটা নাস্তিক হত্যার ন্যায় বিচার করার স্বার্থে কাজ করলে যদি আবার সৃষ্টিকর্তা নারাজ হয় , তাহলে তো আবার স্বর্গের হুর পাওয়া হবে না | তাই এসব হত্যার হুমকি , হুমকিদাতা কোনটাই তাদের চোখে পড়ে না |
একটা কথা পরিষ্কার বলতে যাই , পুলিশ প্রশাসন যদি অপরাধী কিংবা সাসপেক্ট খুজে বের করতে ব্যর্থ হয় , তবে তদন্ত তদন্ত নাম জপ না করে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হোক অপরাধী খুজে বের করার | এটুকু বলতে পারি অন্তত পুলিশের চেয়ে বেশী ক্লু জোগাড় করতে পারবো |
আর মোল্লাগণ কী ভাবছেন আপনাদের জয় হয়েছে ? মোটেও না | হত্যার মত জঘণ্য কাজ করার সময় আল্লাহুআকবার বলা , অতঃপর একজনের মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করা আপনাদের ধর্ম এবং ধর্মজ্ঞানের মান সম্পর্কে পুরো বিশ্ববাসীকে যথেষ্ট অবগত করেছে | আপনারা নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই ইসলামকে নীচ ও বর্বর প্রমাণ করেছেন | ভেবেছেন কী হত্যা করেই কলম রুখে দিতে পারবেন ? তাহলে বলছি শুনুন , নাজিম মরে নি বরং অমর হয়েছে | চিরদিন সে বেচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে | একটা রাজিব, অভিজিৎ , নিলয় , নাজিম মারা যেতে পারে , কিন্তু এমন আরো হাজারো অভিজিৎ ,নিলয়,নাজিম জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন , প্রতিক্ষণ | হত্যা করতে করতে একদিন রক্তের বন্যায় নিজেরাই ভেসে যাবেন |
রাজপথে লেখকের রক্ত পরিষ্কার বলছে, নক্ষত্র হারিয়ে যায় নি বরং নিজের চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে | মনে রেখো, যতবারই হত্যা করো , যতই রাজপথ রক্তে রাঙাও , আবার জন্মাবো , ফিরে আসবো আবার এই মাটির তরে …
কে বলছিল বালপাকনামি করতে!
কে বলছিল বালপাকনামি করতে!