রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি! ধর্ম পালন করে মানুষ। রাষ্ট্র হচ্ছে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ভূখণ্ড। মহান আল্লাহ্ তায়ালা এবং আমাদের নবী করীম মুহম্মদ (স.) নিজেও অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। মুহম্মদ (স.) তার জীবদ্দশায় বিধর্মীদের স্বার্থবিরোধী কোন আইন বা চুক্তি করেননি। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখার সাথে তিনি সবসময়ই ছিলেন সোচ্চার। মদিনা সনদসহ বিভিন্ন চুক্তিতে তিনি সকল ধর্মের সম-অবস্থানের কথাই বলে গেছেন এবং সাম্প্রদায়িক কিছু মুসলমানদের কোঠর আপত্তি থাকা স্বত্বেও তিনি তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। জীবনের শেষ সময়ে, সারা জীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি কারো প্রতি কোন প্রকার অবিচার হোক এধরনের কোন নীতি বা চুক্তিতে তিনি কখনও সম্মতি দেননি।
অপরদিকে, মহান আল্লাহ্ তায়ালা, তার সৃষ্টি সকল ধর্মের মানুষকেই খাদ্য, আলো-বাতাসে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বেঁচে থাকার সকল সুযোগ সুবিধা তিনি সকলকেই দিচ্ছেন। কে কোন ধর্ম পালন করে, এটা উনার কাছে মুখ্য কোন বিষয় নয়। মৃত্যুর পরে মহান আল্লাহ্ তায়ালা নিজে নির্ধারণ করবেন, কে পাপী কে নেক্কার। এসব বিষয় নির্ধারণ করার কোন এখতিয়ার বা অধিকার কোন অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত মোল্লাদের দেওয়া হয়নি। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে যারা সমাজে ফিতনা ফাসাদ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে বরং তাদেরকেই আল্লাহ্ সবচেয়ে বেশী ঘৃণা করেন। নবী করীম (স.) ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কথা কঠোরভাবে নিষেধ করে গেছেন। সত্যিকারের মুসলমানদের আল্লাহ্ এবং নবী করীম (স.) এর এসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তানাহলে মুসলমান নামধারী এসব ছদ্মবেশী কুলাঙ্গার মুসলমানেরাই প্রথমে জাহান্নামী হবে।
যা হোক, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, “এই দেশ হিন্দুর না, এই দেশ মুসলমানদের না।-এই দেশকে যে নিজের বলে ভাববে, এই দেশ তার। এই দেশের কল্যাণ দেখে যার আনন্দে মন ভরে উঠবে, এই দেশ তার। এই দেশের দুঃখে যে কাঁদবে, এই দেশ তার। এবং এই দেশ তাদের যারা এই দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দিবে।”
প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র মোল্লাদের মহা খুশি রেখে রাষ্ট্রে শান্তি বজায় রাখা যাবে না। তাদের মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বাধ্য করতে হবে মহান সংবিধান তথা রাষ্ট্রীয় অনুশাসন, দেশে প্রচলিত আইন-কানুন, রীতিনীতি এবং সংস্কৃতি মেনে চলতে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষলে সেই কালসাপ সুযোগ পেলে ছোবল দিবেই। বাঙালি জাতির জনক, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পন্থায় রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত নাহলে এসব নারকীয় হত্যাকাণ্ড যে সহজে থামবার নয়। বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু রন্ধে রন্ধে চিনতেন, জানতেন। যা অন্য সবার পক্ষে জানা অনেকটা দুর্বোধ্য বটে। স্বাধীনতাকামী, আলোকিত মানুষদের সঙ্গে অন্ধকার জগতের উপাসনাকারী মৌলবাদী, জঙ্গিবাদীদের কখনও আপোষ হবার নয়, হতে পারে না। হিন্ধিতে একটি কথা প্রচলিত আছে, “আক্কেলমানকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়”।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যেও একটি শ্রেণী আছে যারা নিজেদেরকে ওলামা লীগ নামে পরিচয় দেয়। আওয়ামী লীগতো কখনোই তাদের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা বাংলা নববর্ষ বা বর্ষবরণের বরাদ্দ বাতিল করতে চায়। এই তথাকথিত নব্য গজিয়ে উঠা সংগঠনটির মধ্যেই অনেক জামায়াতি-হেফাজতি মৌলবাদীরা লুকিয়ে আছে। সরকারের উচিত হবে, তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের দিকে নজরদারি বাড়ানো। নইলে স্বীকৃতি না থাকা স্বত্বেও এরাই ঘরের শত্রু বিভীষণের রূপ ধারন করবে। খুব বেশী দেরী হয়ে যাওয়ার আগেই তাদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।
এসবের পক্ষে বিপক্ষে মতামত নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মও কম কৌতূহলী নয়। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম যে খুব বেশী আবেগপ্রবণ। নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই চট করে জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদেরও একই অবস্থা। তারা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে সার্টিফিকেট নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু নিজের বিবেক-বুদ্ধি এবং মস্তিষ্ক ব্যবহার করা শিখছে না। চিলে কান নিয়ে গেছে শুনেই চিলের পিছনে ছোটা শুরু করে দেয়, একবারও নিজের কানে হাত দিয়ে দেখে না কান দুটি সঠিক জায়গায় ঠিক আছে কিনা! তোমরা আরও জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাবান হও; জাতি তাই তোমাদের কাছে আশা করে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট অর্জনই জীবনের সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র অর্জন নয়। অর্জিত জ্ঞান সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না জানলে সবই যে ব্যর্থতার নামান্তর।
সর্বোপরি, রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে সকল ধর্ম-মতের মানুষদের সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষায় এন্টি রেইসিজম বা বৈষম্য বিরোধী আইন করতে হবে। আইনের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার সুরক্ষায় স্বল্প খরচে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। পাশাপাশি, বিচার বিভাগের সার্বিক স্বাধীনতাও সুনিশ্চিত করতে হবে।
খোরশেদ আলম, লেখক ও গবেষক
গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট।
গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট। পৃথিবীর সব ধর্মের সারবস্তুই হচ্ছে শান্তি-শৃঙ্খলা।
ধন্যবাদ আপনাকে। আফসোস!
ধন্যবাদ আপনাকে। আফসোস! ধর্মান্ধ, মৌলবাদীরা ধর্মের মূল মর্মই বুঝতে পারে না। @ মুন্সী মামুন
দারুণ যুক্তিযুক্ত একটি লেখা।
দারুণ যুক্তিযুক্ত একটি লেখা। একমত পোষণ করছি।
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য
সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। @ মোঃ সাইফুর রহমান
বাস্তবধর্মী একটি পোস্ট।
বাস্তবধর্মী একটি পোস্ট।
ধন্যবাদ আপনাকে। @ ফজলে এলাহি
ধন্যবাদ আপনাকে। @ ফজলে এলাহি