এতদিন ধারনা ছিল মাদ্রাসায় পড়ুয়া গরীবদের ছেলেরাই জিহাদী হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঢাকার গুলশানের ঘটনায় সেটা ভুল প্রমানিত হয়েছে। এখানে যারা জিহাদী ঘটনা ঘটিয়েছে , তারা প্রায় প্রত্যেকেই ছিল ধনী ঘরের সন্তান, আর ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্ত সেটা হলে কি হবে ? তারা জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই জেনে এসেছে ইসলাম হলো একমাত্র সত্য ধর্ম, মুহাম্মদ হলো একমাত্র সত্য নবী। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের প্রতি অটুট বিশ্বাস নিয়েই তারা বড় হয়েছে। ইংরেজী শিক্ষা তাদের এ বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে নি , পারার কথাও না।
মানুষের মস্তিষ্ক একটা কম্পিউটার বিশেষ। জন্মের পর একটা শিশুর মস্তিস্ক থাকে অনেকটা সিস্টেম সফটওয়ার বিহীন কম্পিউটারের মত। অত:পর সে যখন বড় হতে থাকে , তখন তার দেখা ও শোনা তথ্য তার মাথায় একের পর এক জমা হতে থাকে আর সেসব স্থায়ীভাবেই সংরক্ষিত থাকে। যখন সে কিছুটা বুঝতে শেখে , তার প্রথম কথা ফোটে আল্লাহ ও মুহাম্মদ শব্দ দুটো দিয়ে। তারপর প্রথম শিক্ষা শুরু হয় কোন হুজুরের কাছে আরবী শিক্ষা ও সেই সাথে কোরান পাঠ দিয়ে। সেই সাথে সাথে তার কানের কাছে বার বার নিচের বক্তব্যগুলো বলা হয় ——–
ইসলাম এক মাত্র সত্য ধর্ম
মুহাম্মদ হলো একমাত্র সত্য নবী ও সর্বশেষ নবী
মুহাম্মদ হলো দুনিয়ার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ মানুষ যাকে অনুসরন করা সকলের জন্যেই বাধ্যতামূলক
মুহাম্মদ হলো সবচাইতে মহান, দয়ালু ও ন্যয় পরায়ন মানুষ
মুহাম্মদ হলো আল্লাহর সবচাইতে প্রিয় নবী যাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ দুনিয়াই সৃষ্টি করত না
ইসলাম পালন না করলে দোজখে পুড়তে হবে , পালন করলে বেহেস্তে যাওয়া যাবে
আর এইসব বলার সাথে সাথে কিছু অতি রঞ্জিত গল্প বলা হয় মুহাম্মদের নামে, যার আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই , কিন্তু সেই গল্পে ফুটিয়ে তোলা হয় মুহাম্মদ কত প্রকারে আর কত বড় মহান , দয়ালু ও ন্যায় পরায়ন। শৈশব কালের সেই মস্তিস্ক এসব তথ্য ধরে রাখে চিরকালের জন্যে, এর পর সেই শিশু যতই বড় হতে থাকে , তার জীবন যেমনভাবেই কাটুক না কেন , এই বিশেষ তথ্য গুলো কখনই তার মস্তিস্ক থেকে মুছে যায় না , বরং সেই তথ্যের সাথে আরও অনেক তথ্য জড় হতে থাকে দিনে দিনে কারন টিভি, ইন্টারনেট , ফেসবুক ইত্যাদিতে মুহাম্মদের নামে সব সময় প্রশংসার বন্যা বইতে থাকে আর সেই শিশু সেসব ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই শ্রবন করে আর তার মস্তিস্ক সেসব তথ্য সংরক্ষন করতে থাকে।
সুতরাং এরপর সেই শিশু ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুক বা বাংলা মাধ্যমেই পড়ুক তাতে কিছু্ই যায় আসে না , শৈশবে তার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া মুহাম্মদ ও ইসলাম সম্পর্কিত তথ্য সব সময়ই তার মাথায় কার্যকর থাকে। অত:পর যৌবন কালে যদি সে বেপরোয়া জীবন যাপন করেও থাকে , তাতে তাদের বিশ্বাসে সামান্যতম কোন আচড় কাটে না , কারন সে একই সাথে বিভিন্ন মিডিয়াতে এসব কথাও শুনতে থাকে , ইসলাম কত প্রকারে বিজ্ঞান সম্মত আর কোরান ও হাদিসে কি পরিমান বিজ্ঞান ভর্তি থাকে। এসব শুনে তার ঈমান আরও বেশী শক্ত হয়। এমতাবস্থায় সে যখন বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের আত্মঘাতী হামলার কথা শোনে যে তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে জীবন দিচ্ছে তখন তার মনেও একটা অনুপ্রেরনা কাজ করে। সেই সাথে ব্যপকভাবে এটাও শোনে যে পশ্চিমারা নানা কায়দায় মুসলমানদেরকে বিভিন্ন দেশে ব্যপকভাবে হত্যা করছে , যা তার মনে একটা জিঘাংসার জন্ম দেয়। পরিশেষে সে যখন কোরানে নিচের আয়াতটা দেখে বা কেউ তাকে দেখায় , তখন সে মনে মনে প্রচন্ড জিহাদী হয়ে ওঠে ও জিহাদের নামে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানোর জন্য উন্মাদ হয়ে ওঠে:
সুরা তাওবা – ৯: ১১১: আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।
অর্থাৎ আল্লাহ আগেই তার জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছে , তার বিনিময়ে তাকে শুধুই জিহাদ করতে হবে। সেই জিহাদে সে কাফের মুনাফিকদেরকে হত্যা করবে ও নিজেও মরবে। আর সাথে সাথেই তার পুরস্কার স্বরূপ সে জান্নাতে গমন করবে। আর এই জিহাদ করতে হবে আনন্দের সাথে। এর পর কি আর বুঝতে বাকী থাকে , কেন ধনীর সন্তানেরাও নিজেদেরকে জিহাদী হিসাবে তৈরী করে আত্মঘাতী হামলায় যোগ দেয়, অন্যকে হত্যা করে ও নিজেও এক সময় নিহত হয় ?
৯/১১ অায়াতটা খুব পরিচিত তাই
৯/১১ অায়াতটা খুব পরিচিত তাই না ?
তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি
তার মানে তাওরাত, ইঞ্জিলেও ধর্মের জন্য যুদ্ধ করতে বলেছে, বাহ! বেশতো!!
ইঞ্জিলে কোথাও নিরীহ মানুষ
ইঞ্জিলে কোথাও নিরীহ মানুষ হত্যা করে ধর্ম প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় নি। কোরানের এই বক্তব্যটা ভুল , মিথ্যা ও মুহাম্মদের অজ্ঞতা প্রসূত। বিশ্বাস না হলে আপনি ইঞ্জিল থেকে হত্যা বিষয়ক বাক্য দেখাতে পারেন । পারবেন না। আর সেই কারনেই বোঝা যায়, কোরান মুহাম্মদসহ কিছু লোকের রচনা।