প্রায় ২২০০ আস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে এল-আল এয়ার লাইন্সের টিকেট কিনে ফেললাম। সিডনি থেকে হংকং হয়ে তেল-আভিবের বেন গুরিয়ান বিমান বন্দর। এক টানা ২৪ ঘণ্টার মতো ফ্লাইট। ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স করে ফেললাম। ফের যদি কোন অঘটন ঘটে যায়। সাথে যাবে আমার এক চাচাত ভাই। ইসরায়েল নিয়ে তার আগ্রহও অনেক।
এল-আল হল ইসরায়েল এর জাতীয় পতাকাবাহি বিমান পরিবহন সংস্থা। আর ঠিক এই কারণেই বিশ্বের নাম করা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সম্ভাব্য হামলার তালিকার প্রথম সারিতে এর অবস্থান। জঙ্গি হামলা ঠেকাতে অভাবনীয় নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নিয়ে থাকে এই বিমান সংস্থা। বিমানে ওঠার আগে প্রতিটি যাত্রীকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এল-আল হল পৃথিবীর এক মাত্র বিমান সংস্থা, যাদের প্রতিটি যাত্রীবাহী বিমান ক্ষেপনাস্র সজ্জিত থাকে। বিমান বালারা বেশির ভাগই হয়ে থাকে সাদা পোশাকধারী সামরিক বাহিনীর সদস্য। এছাড়া আরও থাকে সাদা পোশাক ধারি সামরিক বাহিনীর সশস্র সদস্য যাদের বলা হয় এয়ার মার্শাল। এটা অবশ্য অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইট গুলোতেও থাকে। পাইলট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর সাবেক পাইলটদের। বিমানের ককপিটে থাকে দুই পর্যায়ের নিরাপত্তা দরজা। এত নিরাপত্তার পরেও এই এল-আল এয়ারলাইন্সের বিমানগুলো সব চেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে।
যাত্রার দিন ভোর ৫ টায় বাসা থেকে রওনা হলাম। চাচাতো ভাই এর চোখ জ্বল জ্বল করছে উত্তেজনায়। আমিতো একরকম অজানা উত্তেজনা আর আশঙ্কায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। বাসা থেকে বের হবার সময় চাচী আর চাচাতো ভাই এর বউ করুন চোখে বিদায় জানাল।
কোন ঝামেলা ছাড়াই আমরা সিডনি – হংকং ফ্লাইট পার করে দিলাম। বিমানের জানালা থেকে উপভোগ করেছি অস্ট্রেলিয়ার বিশাল ধূসর বাদামি মরুভূমি। কেয়ামত শুরু হল হংকং নামার পর থেকে। প্লেন থেকে বেরুবার পর দেখি আমাদের নাম লিখা কাগজ উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শনা। সে আমাদের এখানে সেখানে ঘুরাতে ঘুরাতে নিয়ে হাজির করলো তেল-আভিভ গামী বিমানের বোর্ডিং দরজার সামনে। বলে রাখি সিডনি থেকে আমাদের এই পর্যন্ত দুইবার নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়। আমাদের ব্যাগগুলো স্ক্যানারে ওই দুই বারই পরীক্ষা করা হয়। বোর্ডিং দরজায় পৌছার সাথে সাথে আমাকে আর আমার চাচাতো ভাই কে আলাদা করে ফেলে ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। চলতে থাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। আমার নাম কি, বাবা মা এর নাম কি, কেন ইসরায়েল যাবো, কই থাকব, কি করবো, আস্ট্রেলিয়াতে কি করি, কে খরচ দিচ্ছে ইত্যাদি। অন্তত ১৫ – ২০ মিনিট একই প্রশ্ন বার বার করে আমাদের দুই জন কে নিয়ে যাওয়া হল আলাদা একটি কক্ষে। সেখানে আমাদের ব্যাগের প্রতিটি জামা কাপড়ের পকেট, মোবাইল ফোনের ফেসবুক, ইমেইল, ক্যামেরা, SMS ইত্যাদি পরীক্ষা করার পর তারা পাসপোর্ট, টাকা পয়সা, আর মোবাইল ফোন ছাড়া সব কিছু বিমানের ভেতরে চেক-ইন করিয়ে দিল। আমাদের আর কিছুই রাখতে দিল না। তারপর শুরু হল আমাদের দুইজনকে আলাদা করে কাপড় খুলে পরীক্ষা। তল্লাশির নামে ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মীরা যা করে, তাতে আর কিছু না হোক, চাকরি সুবাদে প্রতিদিন শত শত মানুষের সম্মুখ এবং পশ্চাৎ দেশ দেখা তাদের হয়ে যায়। এদের কোন প্রশ্ন করলে খুব কৌশলে এড়িয়ে যায়। কি করছে, কেন এসব করছে জিজ্ঞেস করলে এক গাল হাসি দিয়ে বলে, “সামান্য কিছু প্রশ্ন করবো। তেমন কিছু না।” যদিও তারা আমাদের অসম্মানিত করেনি, কিন্তু নিরাপত্তার নামে এত বাড়াবাড়ি আমি আর কোথাও দেখিনি, তাই খারাপ লাগছিল। পরে চাচাতো ভাই বুঝাল যে নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসরাইলিরা খুবই স্পর্শ কাতর।
নিরাপত্তার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমরা বিমানে উঠলাম ক্লান্ত হয়ে। হাতের ঘড়িটিও ওরা রাখতে দেয়নি। ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সময়ে সময়ে বিমান বালারা খাবার দিয়ে গেছে কয়েকবার। ইসরায়েলি বিমানের খাবার খুব একটা খারাপ লাগেনি। তবে বিমান বালাদের দেখে অন্যরকম লেগেছে। তারা কথা খুব কম বলে। মুখে তেমন একটা হাসি নেই। অপূর্ব সুন্দরী বিমান বালা গুলো কেমন যেন যান্ত্রিক। অন্যান্য এয়ারলাইন্সের বিমান বালারা আরও অনেক হাসিখুশি হয় থাকে।
বিমান ভর্তি ইসরায়েলি দেখে ধারনা করি হংকং-এ তাঁদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক নিশ্চয়ই গভীর। ঘুমিয়ে পার করে দিলাম অধিকাংশ সময়। বিমান যখন তেল-আভিবের আকাশে, তখন হটাৎ করে বজ্রপাত হল প্লেনের ডানায়। জানালা দিয়ে সেই দৃশ্য দেখে শীতল হয়ে গিয়েছিলাম কয়েক মুহূর্ত। একবার মনে হয়েছিল এটা কি আসলেই বজ্রপাত নাকি গোলার আঘাত। বেঁচে নামবো তো?
আর কোন নাটকীয়তা ছাড়াই বিমান তেল-আভিভ নামলো। রাত তখন ১১টা। আকাশ ছিল অনেক মেঘলা। ঝুর ঝুর করে বৃষ্টি হচ্ছিল বেন-গুরিয়ান বিমান বন্দরে। এত লম্বা বিমান ভ্রমণ জীবনে এই প্রথম। খুব ক্লান্ত লাগছিল। এরা কাস্টমস বা ইমিগ্রেশন এর জন্য কোন ফরম পুরন করতে বলে না। প্লেনের দরজা খুলে যেতেই সবাই একরকম দৌড়ে বেরিয়ে গেল। হয়তো লম্বা ভ্রমণের ক্লান্তি সবাইকে অস্থির করে দিয়েছে।
ইমিগ্রেশনের লম্বা লাইন। আবার জিজ্ঞাসাবাদ। সেই একই পুরানা প্রশ্ন। এক পর্যায়ে আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট অন্য একজন অফিসার কে দিয়ে আমাকে বসতে বলল পাশের এক কামরায়। সেখানে দেখি বিভিন্ন দেশের আরও অনেকে। শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গ সব ধরনের মানুষ। বুঝলাম বাঙ্গালী পাসপোর্ট বলে আমাকেই শুধু আটকানো হয়নি। মনে মনে আরও এক দফা জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক এই সময়ে একজন আমার নাম ধরে ডাক দিল। বুঝলাম এবার আমার পালা। ঠিক তখনি আমাকে অবাক করে দিয়ে জানাল আমি যেতে পারি। হাতে ধরিয়ে দিল পাসপোর্ট।
বলে রাখা ভাল, ইসরায়েলে ঢুকার বা বের হবার সময় পাসপোর্টে কোন রকম সিল লাগানো হয় না। পরিবর্তে এরা যাত্রীর ছবি সহ নানা তথ্য লেখা ছোট এক টুকরা কাগজ ধরিয়ে দেয়। আমাকে জানানো হল, বেরিয়ে যাবার সময় এটাই আবার ওদের দেখাতে হবে। পরে জেনেছি কিছু কিছু আরব দেশ ইসরায়েল ভ্রমণের প্রমাণ পেলে আর ঢুকতে দেয় না। এই সমস্যা এড়াতেই গত কয়েক বছর আগে থেকে এমন ব্যাবস্থা নিয়েছে ইসরায়েলি সরকার।
বেন-গুরিওন বিমান বন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আরও এক দফা নিরাপত্তা তল্লাশির মুখোমুখি হয়েছিলাম। এবার এক সাথে তিন জন চৌকস নিরাপত্তা কর্মকর্তা আমাদের বাইরে এনে নিশ্চিত করলো আমরা আসলেই ট্যাক্সিতে উঠছি। শুরু হল আমাদের জেরুজালেম যাত্রা।
How you enter in Israil with
How you enter in Israil with BD Passport? It is prohibited by BD govt.
আমিতো গিয়েছি। আমি এখনো তেল
আমিতো গিয়েছি। আমি এখনো তেল-আভিভে। ছবিও দিলাম। ওপরের ছবিতে ওটা আমি
আপনি আমার প্রথম লেখাটা পড়ুন।
আপনি আমার প্রথম লেখাটা পড়ুন। ভিসা পাবার গল্পটা লিখেছি সেই খানে
I wish one day I will visit
I wish one day I will visit
আপনাকে উপযুক্ত পরিণতি ভোগ
আপনাকে উপযুক্ত পরিণতি ভোগ করতে হবে| আপনি দেশ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন| আপনি যা করেছেন তা দেশদ্রোহিতার সামিল|
ইসলামের কোথায় লেখা আছে ইজরাইল
ইসলামের কোথায় লেখা আছে ইজরাইল ভ্রমণ করা যাবে না? ও আচ্ছা, ইহুদীদের জায়গা জমি দখল করার কথা লেখা আছে অবশ্য!!!
ইসরাইলে গেলে বুঝি অনৈসলিমক
ইসরাইলে গেলে বুঝি অনৈসলিমক কাজ হয়ে যায়? এই ধরনের ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রতিটা মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
আপনাকে সত্য কথা বলার অপরাধে
আপনাকে সত্য কথা বলার অপরাধে চাপাতির নিচে মাথা দেবার ফতোয়া জারি করা হলো।
ইসরাইলে একবার যাওয়ার ইচ্ছে
ইসরাইলে একবার যাওয়ার ইচ্ছে আছে।