সে এক অদ্ভুত পাগল!
পথে ঘাটে, শহরে-বন্দরে, বাজারে, রাস্তায়, যেকোন জায়গায়
মানুষ পেলেই খুব কাছে গিয়ে বলে উঠে,
আপনি কি খুনি?
তবে সে মোটেই উত্তেজিত নয়, খুবই ধীরস্থির তার পদক্ষেপ।
কোমল, আদুরে তার ভাষা,
মানুষের খুব কাছে গিয়ে,
কোন মহৎ কর্মের সাধুবাদ জানানোর মত করে,
বলে উঠে,
আপনি কি খুনি?
মানুষ প্রথম দিকে চমকে উঠেছে,
ভীতভাবে তার দিকে তাকিয়েছে।
পরক্ষনেই কেউ ঝাড়ি দিয়েছে, কেউ চুপচাপ সটকে পড়েছে,
কেউ হেসেছে, কেউ মৃদু কেশে কিছু বলতে গেছে।
কিন্তু ধীরে ধীরে সবখানে এটা ছড়িয়ে পড়ায়, সবাই বুঝেছে,
এ পাগল ছাড়া কিছু নয়!
সে কি কোন খুনিকে খুঁজছে?
কার খুনি?
যেখানে সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, যেখানেই যাও দেখা যাবে খুনিরা নিজেকে নির্দোষ প্রমানিত করার খেলার মেতে উঠেছে,
সেখানে কেউ কি তার কাছে নিজেকে খুনি বলবে?
আর কেনই বলবে?
আর সে কি আশা করছে কেউ বলুক?
অথবা এমন কি হতে পারে সে সবাইকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে?
কিন্তু তাহলে তো তার প্রশ্ন হতো, আপনিও কি খুনি নন?
কিন্তু তার প্রশ্ন করা শুনে তো মনে হচ্ছে না সে খুব রাগ ঝাড়ছে।
ঐ একটি প্রশ্ন ছাড়া আর কোন কিছু বলছেও না।
তাকে পাগল না ভেবে কোন উপায় আছে?
নীটশের সেই পাগলের মত সেও কি একদিন অধৈর্য হয়ে তেমন বলতে শুরু করবে,
যেমন নীটশের পাগল সবখানে চিৎকার করছিল, ঈশ্বর মারা গেছে,
ঈশ্বর মারা গেছে!
কারণ সেতো কোন খুনি পাবে না,
নিজেকে কেউ খুনি স্বীকার করবে না।
অবশ্য এখন যেমন অনেক ছেলে মেয়েরা তাকে পাগল ভেবে পিছু নেয়,
তারপর চিৎকার করতে থাকে, আমি খুনি, আমি খুনি!
একদিন যাকেই সে প্রশ্ন করবে, তারাও কি বলে উঠবে, আমিই খুনি।
কারণ তারা জানে তাতে কিছু আসে যায় না।
দেখা যাবে অনেক মানুষ খুন করে এসেই তাকে খুঁজতে থাকবে,
কারণ কাউকে বলে মনটা হালকা করা চাই।
তবে তখন এ পাগল কি করবে তা জানি না।
ছেলেমেয়েদের চিৎকারে পেছনে তাকিয়ে মাঝে মাঝে হাসি দেয়া ছাড়া সে কিছুই করে না।
যখন সবাই একই কিছু করবে, তখন সে যে ভিন্ন কিছু করবে তাও ভাবা যায় না।
আর তারপর কি সে খুনি খুঁজা বন্ধ করে দেবে?
আর কোথাও এ প্রশ্ন শোনা যাবে না, আপনি কি খুনি?
একদিন যদি সত্যিই কোন খুনি সে পেয়ে যায়
তা কি তার কাছে কোন অর্থবহন করবে?
আমি তা জানি না,
আসলে কেউ জানে না;
হয়তো সে নিজেও জানে না।
তবে তাতে কিছুই আসে যায় না।
১৫১৬, ঢাকা।