একটা উটকো সময় চারপাশে । হরতকি অথবা টিকটিকি পচা একটা গন্ধ সারাটা দিন সহ্য করতে হয় । কেউ পারে, কেউ পারেনা । যারা পারে তারা বোকার মত গুরুদেবকে প্রণাম করে, যারা পারেনা তারা সারাদিন কেবল ছেব ফেলে । সারাদিন ছেব, এত ছেব আসবে কোথা হতে ? স্বভাবত জলও খেতে হচ্ছে প্রচুর । কারো কারো পাকস্থলি অনেকদিনের ডায়েটিঙের ফলে ছোট হয়ে গেছে, অনেক ছোট, ঠিক জন্মের মত । আর বড় হতে পারছেনা । কিন্তু জল খেতেই হচ্ছে, ফলে পেট ফেটে চৌচির । তবু লোকগুলো মরছেনা । বেঁচে আছে । বেঁচে থাকাটাই একমাত্র কাজ । একটা উটকো সময় বইছে চারপাশে ।
চাঁদের বুড়ির আর কোন কাজ নেই, কয়েকশো বছর পুরনো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটা নীমের ডাল দিয়ে দাঁত মাজে । চোখের জলের বরফের মত পবিত্র তাঁর দাঁত । মুখ থেকে মড়া পোড়ানো গন্ধ বেরোয়, তবু কেন এত দাঁত মাজে কে জানে! হয়ত তাঁর বর সেই কবে যৌবনে ফুল শয্যার রাতে চুমু খেতে গিয়ে মুখের দুর্গন্ধের জন্য অজ্ঞান হয়ে শেষে মারা গিয়েছিল, সেই থেকে বুড়ি দাঁত মাজে । সুতো কাটেনা কেন বুড়ি? রমেন এসেছে পৃথিবী থেকে বুড়ির সুতো কাটার কৌশল শিখে যাবে বলে । কিন্তু এসে থেকে দেখছে বুড়ি দাঁতই মেজে চলেছে । শূন্য হাতে ফিরে গেলে চাকরিটা যাবে । বুড়ি তা বোঝেনা, শুধু দাঁত মাজে, শুধু দাঁতই মাজে ।
রমেনের বাড়ি বঙ্গে । বাঁশ, বেত আর সনের ছোট্ট দুই রুমের ঘর । একটাতে ও আর ওর বউ থাকে, অন্যটাতে হয় পাক । বাচ্চা কাচ্চা নেই, অমল যখন খুব ছোট ছিল, তখন একদিন আম গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিল । পরনে ছিল গ্যাঞ্জির প্যান্ট, বাঁশের মোরায় পড়ে বিচি ও নুনুটা একেবারে তছনছ হয়ে যায় । শেষে খসে পড়ে । বদ্যি কবিরাজ দিয়ে যখন কিছুই হলনা, তখন ওর ঠাকুমা কুমোরকে দিয়ে একটা মাটির নুনু তৈরি করিয়ে লাগিয়ে দিলেন । এমনিতে সব কাজই হয়, কিন্তু বিচিতো আর মাটি দিয়ে তৈরি করা যায়না । বিচি না থাকায় ওর সন্তান হয়নি, সোনা দিয়ে বিচি গড়ানো যায় । তার জন্যে প্রয়োজন প্রচুর টাকার । সেই টাকা সংগ্রহের উদ্দেশেই চাকরি নিয়েছে কোম্পানিতে । অনেক কষ্টে চাকরিটা জুটেছে । এর আগেও কয়েকবার অসফল হয়েছে নিজের প্রজেক্টে । এবারও ঘটনা গড়াচ্ছে সেদিকে । এবার ফল না ফললে চাকরি হবে নট । চাঁদের বুড়ি তবু দাঁতই মাজে, শুধু দাঁতই মেজে চলেছে ।
কি যায় আসে, নাই বা থাকল বংশের বাত্তি । কত কিছুইতো থাকেনা । সব কিছু থেকে লাভ নেই । থাকার অর্থ পুরোই ক্ষতি । না থাকুক । ফিরে এস প্রিয়, ফিরে এস । এইসব কথা লেখে ডাকে পাঠায় রমেনের বৌ । ঠিকই বলে হয়ত । ও চাঁদের বুড়ি, কোথায় তোমার চরকা ? কোথায় তোমার সুতা ? চাঁদের বুড়ির বয়েই গেছে জবাব দিতে । বুড়ি দাঁত মাজে, শুধু দাঁতই মাজে ।
আর ভাল লাগেনা, একটু ঘুরে এলে কেমন হয় ? বেশি দূরে নয়, আশপাশে কোথাও । ঘুরতে মন চায় রমেনের, তবু নড়েনা একচুল । ঘুরতে সে আসেনি, কোম্পানি পয়সা খরচ করে ওকে চাঁদ দেখার জন্যে পাঠায়নি, পাঠিয়েছে এক কিংবদন্তি বিদ্যা শিখে যাবার জন্য । খালি হাতে ফিরে তো যাওয়াই যায়, নাইবা রইল বংশে বাতি দেবার কেউ । কিন্তু এভাবে ফিরে গেলে কি বেঁচে থাকতে খুব ভাল লাগবে । চাঁদে আসা হয়েছে, বুড়িকে যে খোঁজে পায়নি তাও নয়, এমতাবস্থায় ফিরে যাওয়ার মানে কি – ভাবতেও লজ্জা করছে রমেনের ।
“ও চাঁদের বুড়ি, আই লাভ ইউ ।” এ কি বলে ফেলল রমেন কুমার পোদ্দার ! ছি ছি নিজের বউ থাকতে অন্য স্ত্রীকে সে একথা বলতে পারলো ? বলতে তো সে চায়নি, বলতে চেয়েছিল চাঁদের বুড়ি সুতা কাটো । মুখ ফসকে বেড়িয়ে এল কি! মুখ ফসকে কি এমনি এমনি বেড়িয়ে আসে, মনে পাপ না থাকলে? না । কখনোই না । রমেনের চোখে জল ।
চাঁদের বুড়ি এতক্ষণে চাইল, চোখে বিরক্তি । চোখের দৃষ্টি যেন বলছে, এই শালা গাছের বাচ্চা গাছ, দূর হ, দূর হ বলছি । চোখ বললেও মুখ বলতে পারেনা, চাঁদ বুড়ির সম্পত্তি নয় । হাতের ওই দাঁতমাজা ডাল ছাড়া বুড়ির আর কোন সম্পদ আছে বলে কোন টিভি চ্যানেলও জানেনা । কিন্তু হায়, রমেন কি ভুলটাই করল । দেশ সুদ্ধু খবরের চ্যানেল এবার নিউজ দেখাবে রমেন ও চাঁদের বুড়ির প্রেমের কেচ্ছা । যাহা কল্পনাযোগ্য ও পড়িতে সুস্বাদু তাহাই নিউজ – সরকারি সংজ্ঞা বলে কথা । হায় বৌ, ক্ষমা করো আমায় ।
চলবে….
Конструкции из стекла.
Продажа стеклянные тамбуры от компании city-glass.ru
стеклянные ограждения на профиле
УКП-66 лучшая замена обычным домофонным трубкам