ভদ্র লোকটির নাম ইয়াসিন মালিক। তিনি একজন কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং কাশ্মীর উপত্যকা জঙ্গিদের মাস্টার মাইন্ড। যিনি ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করার সবসময় পক্ষে ছিলেন। ইয়াসিন মালিক জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের (JKLF) চেয়ারম্যান, তার দল মূলত কাশ্মীর উপত্যকায় সশস্ত্র জঙ্গিবাদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলো। শুধু তাই নয়, এই ভদ্রলোক ইয়াসিন মালিক, হামিদ শেখ, আশফাক ওয়ানি এবং জাভেদ আহমেদ মিরের সাথে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে JKLF জঙ্গিদের – “HAJY” গ্রুপ নামে পরিচিত – কোর গ্রুপ গঠন করেছিলেন। এই ইয়াসিনের নেতৃত্বে JKlF এর জঙ্গি সদস্যরা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে গেরিলা যুদ্ধ চালায়। ইয়াসিন মালিক ভারতের জেল থেকে ল
তার ৫ সহযোগী জঙ্গিকে মুক্তির লক্ষ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদের কন্যা রুবিয়া সাঈদকে অপহরণ করে এবং সরকার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এই ইয়াসিন মালিক 1990 সালে 25 জানুয়ারী তারিখে শ্রীনগরের রাওয়ালপোরাতে ভারতীয় বিমান বাহিনীর 40 জন কর্মীকে লক্ষ্য করে আক্রমণ ও সন্ত্রাসবাদী হামলা চালায়। যে হামলায় চার ভারতীয় আইএএফ কর্মী মারা যান। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম বিবেচনায় নিলে এই ভদ্রলোক কিন্তু অনেক গুনে গুনাতীত, তা আর বলতে হয়না।
গতকাল ২৫ মে, ভারতের আদালতে ইয়াসিন মালিককে উপরে উল্লেখিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আবার এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীটির কিন্তু জন সমর্থকের অভাব নেই। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জুড়ে এই জঙ্গি সন্ত্রাসীটির সমর্থক অলিতে গলিতে ছড়িয়ে আছে। কারণ ইয়াসিন মালিক চাই, পুরো কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করতে।
মনে একটা প্রশ্ন জাগে, ভারতবর্ষ আর কতোটা উদার হবে? ১৯৪৭ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, সোহরাওয়ার্দী, আমজাদ খান, ওসমান খান এরা মিলে মুসলমানদের জন্য ভারত থেকে দুটো সেস্ট (বাংলাদেশ আর পাকিস্তান) নিয়ে নিল। তার উপর আবার কাশ্মীরে বিগত ৪০ বছর ধরে জঙ্গি-সন্ত্রাসীর প্রমোটদাতা ইয়াসিন মালিকরা চাই কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করতে। কথা হলো, কাশ্মীর আলাদা করে ইয়াসিন মালিকরা আসলে কি করবে? হ্যাঁ, ভবিষ্যতে আরো একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রের জম্ম দেবে। যেখানে কোনো ডেমোক্র্যাসি থাকবে না, সেক্যুলারিজম থাকবে না, অমুসলিম সংখ্যালঘুদের নুন্যতম নিরাপত্তা থাকবে না। বাংলাদেশ আর পাকিস্তান রাষ্ট্র আলাদা হয়ে কি হলো? দুটোই ইসলামিক রাষ্ট্র হলো। দুটো রাষ্ট্রেরই রাষ্ট্রধর্ম হলো ইসলাম। দুটোই রাষ্ট্রেই সংখ্যালঘুদের নুন্যতম নিরাপত্তা নেই। পাকিস্থানে আগে হিন্দু জনগৌষ্ঠি ছিল ১৪%, এখন ২%! বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর পর হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল ২৪%, আর এখন ৭%! দেশ ভাগের পর পর ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠী ছিল ৭%, আর এখন ১৪%!
৫৭টি দেশ নিয়ে গঠিত ওআইসি (Organisation of Islamic Cooperation)। এই ওআইসির ৫৩টি রাষ্ট্রই মুসলিম প্রধান দেশ। যে রাষ্ট্রগুলোতে কোনো ডেমোক্র্যাসি নেই, সেক্যুলার নেই, গন মানুষের অধিকার নেই। সৌদি আরব, ওমান, কাতার, আরব আমিরাতে তো অমুসলিমদের কোনো ধর্মীয় পুজা বা প্রার্থনা করার অধিকার নেই। তো ইয়াসিন মালিকরা কাশ্মীর রাজ্য নিতে পারলে সেখানে কাশ্মীরী হিন্দুদের অবস্থা একই হতো। কাশ্মীরী হিন্দু পণ্ডিতরা এখনো পর্যন্ত সেই আতংক থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেনি। ১৯৯০ সালে ৫ লক্ষ কাশ্মীরী হিন্দু পন্ডিতকে মেরে, কেটে, ধর্ষণ করে এক রাতে রাতের আঁধারে তাড়িয়েছিল সেখানকার ইসলামি দলের জঙ্গিরা। সেই সময় কাশ্মীরী হিন্দুদের বলা হয়েছিল, তোমরা কাশ্মীর ছেড়ে চলে যাও, নাহলে মুসলমান হয়ে যাও! শুধু তা নয়, কাশ্মীরী হিন্দুরা আসার সময় তাদের মেয়েদের যে যেভাবে পেরেছে বন্দী করেছে। সেখানের ইসলামি দলের জঙ্গি সন্ত্রাসীরা যে যেভাবে পেরেছে গনিমতের মালের মতো সেইসব কাশ্মীরী হিন্দু মেয়েদের ভাগ ভাটোয়ারা করেছে।
পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে ডেমোক্র্যাসি ও সেক্যুলার নীতি প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। বর্তমান বাংলাদেশও চলছে অঘোষিত ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। ওয়াজ মাহফিলে আলেম ওলামারা অমুসলিম বিরোধী শত বক্তব্য দিলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেন না। মৌল্লারা যা বলে, সরকার তাই শুনে। যা ডেমোক্র্যাসি ও সেক্যুলার রাষ্ট্রের সাথে যায় না। ইয়াসিন মালিকরা যদি কাশ্মীর দখল নিতে পারতো, তাহলে কাশ্মীর কখনো ডেমোক্র্যাসি ও সেক্যুলারের আলোর মুখ দেখতো না। এটাও বর্তমান পাকিস্তানের মতো এক নাপাকিস্থানে পরিনত হতো। ইয়াসিন মালিককে ভারতের আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে একদম সঠিক কাজটিই করেছে।