তালার ক্লিক শব্দটা হতেই রনির মনটা অন্যান্য দিনের মত আজ আর বিষাদে ছেয়ে না গিয়ে উল্টো আনন্দে ছেয়ে গেল। বড় ভাইয়ার জন্মদিনে বাসার সবাই কোন হোটেলে যেন খেতে গেছে। আরেকটু অপেক্ষা করলো, ওরা যদি আবার ফিরে আসে কোনও কারনে? মিনিট ৫ যেন আর কাটে না! কিছুক্ষন অপেক্ষা করে রান্নাঘরে ওর চাদর আর পাটি মোড়া পোটলা খুলে বের করল একটা ভাজ করা সাদা কাগজ আর পেন্সিল। রনি আজ একটা চিঠি লিখবে। বাড়ি থেকে আসার পর দাদাজানের সাথে আর কখনও যোগাযোগ হয় নাই! দাদাজানের কথা ভাবতেই মনে পড়লো আগে এমন শীতের দিনে সক্কাল বেলা দাদাজানের সাথে হাঁটতে যেত ঝিলের পাড়ে। শীতের দিনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা ঝিলে দেখা যেত অনেক বড় বড় হাঁস। দাদাজান বলতো, “এইগুলান আম্রিকা থিকা উইড়া আইসে!” দাদাজানের যে কত জানাশুনা আর বুদ্ধি? দাদাজানের বকা খেয়ে আম্মা তারে স্কুলে দিসিল। ওখানেই শেখা লেখাপড়ার খানিকটা। কাগজটা নিয়ে ভাঙ্গা হাতে পেন্সিলের দাগে লেখা শুরু করলো রনি – “দাদা, সালাম নিবেন…” মনে পড়ে গেল রাস্তায় বার হলেই দাদাজানকে সবাই সালাম দিতো। দাদাজান চেয়ারম্যানের বাড়ি দেখাশুনা করতেন। তাদের বাড়িতে দাদাজান,আব্বা-আম্মা, আনোয়ারের মা আর আনোয়ার থাকতো। বাসা থেকে আব্বা আম্মা চলে যেত একটা গার্মেন্টে কাজ করতে।
আবার লেখা শুরু করে রনি – “দাদাজান আপনার কথা খুব মনে পড়ে। আনোয়ার কেমন আছে? আমাদের মুরগিটার কি বাচ্চা হইসে দাদাজান? বাড়ির পিছে একটা কচু গাছ ছিল, ওইটা কি উঠাইছেন?” দাদাজানের সাথে একবার হাটে গেছিল বেশ আগে। কচু কিনে আম্মা কচুর চোখ একটা দিয়ে বলছিল মাটিতে পুতে দিতে। ওটা থেকে বিরাট বড় একটা কচু গাছ হইছিল, ওর চেয়েও উঁচু। দাদাজান কোরবানির সময় বলছিলেন কচু দিয়া মাংস রান্না করবেন। এই বাড়িতে এরা প্রায়ই মাংস রান্না করে। দুই একদিন খাইছে সেও। কিন্তু আম্মার রান্নার কাছে লাগে না কিছুই।
রনি চিঠি লেখা শিখেছে বাড়ির বড় ভাইয়ার কাছ থেকে। জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে দুপুরে কথা হয় পাশের বস্তি থেকে খেলতে আসা বজলুর সাথে। বজলু বলসে তার মামা বলসে “চিটি পাডাইতে অইলে, যারে পাডাইবা তার নাম লিখা, কই থাকে ওইটা ওই রাস্তার কোনার লাল বাক্সে ফালায় দিলে চিঠি চইলা যাইবো যাগামতন।” সেই থেকে রনি অপেক্ষায় আছে কখন সে তার দাদাজানকে চিঠি লিখবে!
“দাদাজান আপনি চইলা আসেন। এই বাড়িতে আমার আর ভাল্লাগে না। আপনার সাথে একবেলা খাইয়া থাকমু তাও আমারে নিয়া যান এই খান থেকে। আমারে বড় আম্মা খালি বকে আর বড় আব্বা মারে! দাদাজান, আপনি বলছিলেন আমার আব্বা-আম্মা তাজ্জিন গার্মেন্ট থিকা কই চইলা গেছে তাই আমরা বলে লাখ লাখ টাকা পামু। টাকা কি পাইছেন? দাদাজান, টাকার দরকার নাই,আপনি আব্বা-আম্মারে বলেন চইলা আসতে। দাদাজান আমি বইসা থাকলাম। আপনি আসার সময় আমার জন্যে একটা হাপপেন নিয়াই আইসেন। আমি ওইটা পইড়া বাড়ি যামু। আমার জন্য দোয়া করবেন।”
জীর্ন কাগজটা ভাজ করে একটা হাতে বানানো খামে চিঠিটা ভরে জানালা দিয়ে ডাক দেয় বজলুকে; “বজলু তুই আমার চিডিডা এট্টু ওইখানে ফালায় দিয়া আসবি?” ‘ওই তুই ঠিকানা লেখছস’ বজলুর কথায় সম্বিত ফিরে পায় রনি। খুব যত্ন করে খামটার উপরে লেখে-
“প্রাপক
দাদাজান,
ঝিলপাড়ে আনোয়ারদের বাড়ি।”
বজলুর হাতে খামটা দিয়ে ওকে খামটা ডাকবাক্সে ফেলতে দেখে খুশিতে মনটা ভরে যায় রনির। এইবার দাদাজান এসে তাকে নিয়ে যাবে এইখান থেকে। নিশ্চিন্ত মনে রান্নাঘরের মেঝেতে পাটিটা বিছিয়ে ঘুমিয়ে যায় রনি। স্বপ্নে দেখতে থাকে তার দাদাজান বাড়ির উঠানে বসে তার চিঠি সবাইকে পড়ে শুনাচ্ছে। তার বাবা-মা ফিরে এসেছে তাজরিন গার্মেন্টস থেকে তার জন্যে একটা লাল হাফপ্যান্ট নিয়ে। ঘুমের মধ্যে শত দূর্ভাবনায়ও তার মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।
চমৎকার গল্প।
আপনি গল্পে যা
চমৎকার গল্প। :থাম্বসআপ:
আপনি গল্পে যা লিখেছেন, এটাই বাস্তবতা। তাজরিন গার্মেন্টসে কত রণির মা পুঁড়ে ছাই হয়ে গেছে এটা রহস্যজনক থেকে গেল।
আর হ্যাঁ, ইস্টিশনে স্বাগতম।
Thnx
:ফেরেশতা: Thnx
তাজরিনে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ
তাজরিনে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার বিচার চাই।
গল্প ভালো হইছে।
Thank you নুর নবী দুলাল. Glad
:ফেরেশতা: Thank you নুর নবী দুলাল. Glad to be here. Hoping to stay long!
গল্প ভালো লাগল। আশা করি
গল্প ভালো লাগল। আশা করি নিয়মিত লিখবেন। :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ: :থাম্বসআপ:
ধন্যবাদ আতিক ভাই। আশা রাখি
ধন্যবাদ আতিক ভাই। আশা রাখি নিয়মিত লিখবো। ইস্টিশন পার্মানেন্ট হয়ে গেলে এখানেই পার্মানেন্ট হবার চিন্তা করছি।
শেয়ার করে দিলাম।
শেয়ার করে দিলাম।
আনেক ভালো লাগলো পড়ে। নিয়মিত
আনেক ভালো লাগলো পড়ে। নিয়মিত এমন ভালো ভালো গল্প পাবো আশা রাখছি