সালাফিদের লিটারাল কুরান ব্যাখ্যাই একমাত্র ব্যাখ্যা নয়, বরং বিভিন্ন কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা আছে এই দাবি করায় আসিফ মহিউদ্দীন ‘পারভেজ আলম কেনো জাকির নায়েক হইলেন’ নামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস লিখেছিলেন। আসিফ মহিউদ্দীন বুঝতে পারে নাই যে আমি কুরানের কনটেক্সচুয়াল ব্যাখ্যাকে রিকগনাইজ করেছি মাত্র, নিজে কুরানের কোন ব্যাখ্যা করতে যাই নাই। আসিফ মাঝে মাঝে খুব ভালো মানের লেখা লেখে, আবার মাঝে মাঝে খুবি খারাপ মানের। এই কথাটা তাকে আমি আগেও বলেছি। এই লেখাটি ছিল একটি খুবি খারাপ মানের লেখা। তাই এটার জবাব দেয়ার দরকার মনে করি নাই। পাশাপাশি বাকী বিল্লাহ ভাই এই লেখার স্থুলতা নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, কোরানের কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা কি জিনিস তা আসিফ ধরতে পারে নাই, ধরতে পারলে হয়তো এতোটা স্থুল স্ট্যাটাস দিতেন না। যাই হোউক, তর্কে এসেছে বলেই কোরানের কন্টেক্সচুয়াল পাঠ সম্বন্ধে কিছু লিখবো বলেছিলাম। তাই শুরু করছি।
প্রথমেই বলা দরকার, কন্টেক্সচুয়াল পাঠ বলতে ঐতিহাসিক কন্টেক্সট অনুযায়ি পাঠ করা বুঝাচ্ছি। আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যের সাথে কুরানের বক্তব্যকে মিলানোর জন্যে অনেকে কুরানের বিভিন্ন আয়াতের নানান রকম অর্থ বের করে থাকেন, সেটা ভিন্ন জিনিস। আসিফ মহিউদ্দীনের স্ট্যাটাস দেখে মনে হয় তিনি খুব সম্ভবত কন্টেক্সচুয়াল পাঠ বলতে তাই বুঝেছেন। ঐতিহাসিক কন্টেক্সট অনুযায়ি পাঠ হলো কুরআনের কোন আয়াত কোন কোন ঐতিহসিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে তা বিবেচনা করা এবং সব আয়াতকে সকল সময়ের জন্যে প্রযোজ্য আইন হিসাবে বিবেচনা না করা। এটা পুরোপুরি আধুনিক বা লিবারাল পাঠ পদ্ধতি না। বহু আগে থেকেই প্রচলিত আছে। কুরানের তাফসিরে ঐতিহাসিক কনটেক্সট আলোচনার রীতি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে কুরানের যেসব আয়াত পরস্পরবিরোধী সেগুলোর ক্ষেত্রে কনটেক্সটের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। আগেই বলেছি, কুরানের পুরাপুরি লিটারাল ব্যাখ্যা করে একমাত্র সালাফিরা। অন্যরা লিটারাল ব্যাখ্যার পাশাপাশি মেটাফোর, ইন্টারপ্রিটেশন, কন্টেকস্ট ইত্যাদি নির্ভর ব্যাখ্যা গ্রহণ করে। আমি মূলত ঐতিহসিক কন্টেক্সট আলোচনার মধ্যেই নিজের বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখবো। কুরানকে তার ঐতিহাসিক কন্টেক্সট অনুসারে ব্যাখ্যা করা যাবে কি যাবে না, কুরান ব্যাখ্যায় কন্টেক্সট কতোটা গুরুত্বপূর্ণ এসব আসলে ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্ন। কুরান ইতিহাসের ভেতরকার জিনিস না বাইরের, সেই বিতর্কের মধ্যে এই প্রশ্নের উত্তর আছে। ইসলামের ইতিহাসে এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত বিতর্ক আছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই বিতর্কের একটি পক্ষের নায়ক ছিলেন সালাফি ইসলামিস্টদের দুই শায়েখের একজন, ইমাম আহমেদ হাম্বল। তিনি সুন্নি ইসলামের চার মাজহাবের সর্বশেষ ও সবচাইতে কট্টর হাম্বলি মজহাবের প্রতিষ্ঠাতা।
ইসলামী ধর্মতত্ত্ব (theology) শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল আব্বাসিয় খেলাফতের যুগে, মুতাজিলা এবং তাদের বিরোধী আশারিয়া ধর্মতাত্ত্বিকদের মাধ্যমে। ধর্মতত্ত্ব আল্লাহর স্বরূপ ও আল্লাহর আইন ব্যাখ্যায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। খলিফা আল মামুন (৭৮৬-৮৩৩) ছিলেন মুতাজিলা ধর্মতত্ত্বের অন্যতম সমর্থক। তিনি ঠিক করেছিলেন, দুনিয়ার সব মুসলমানকে মুতাজিলা লাইনে আনবেন। মুতাজিলা ধর্মতত্ত্ব অনুসারে, কুরান ইতিহাসের অংশ, ইতিহাসের বাইরের কিছু না। মুতাজিলা ধর্মতাত্ত্বিকরা আল্লাহর একত্ব অর্থাৎ তাওহিদের র্যাশনাল সমর্থক ছিলেন। তাদের মতে একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টির ঊর্ধে, বাকিসব কিছুই সৃষ্টির অংশ। মুতাজিলাদের মতে, ইতিহাসের একটি সময়ে কুরান সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সেই সময় মুসলিম উলামাদের অনেকের মাঝেই এইরকম ধারণা প্রচলিত ছিল যে কুরান ইতিহাসের বাইরের বিষয়। তারা প্রচার করতো যে, কুরান যেহেতু আল্লাহর বানী, তাই আল্লাহর মতোই এই বানী ইতিহাসের আগে থেকেই অনন্তকাল যাবৎ বিরাজমান। উলামাদের এই ধারণার নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই সময় ইমাম হাম্বল। মুতাজিলা ও ইমাম হাম্বলের এই দুই ব্যাখ্যা কুরান ব্যাখ্যায় মৌলিক পার্থক্য তৈড়ি করে। ইমাম হাম্বল ও তার সমমনা আলেমরা কুরানকে ইতিহাসের ঊর্ধে গন্য করে কুরানের ডিভাইনিটিকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছেন। তাদের ব্যাখ্যায় মুহাম্মদ হলেন কুরানের নিরপেক্ষ বর্ণনাকারী মাত্র। কুরান অনন্তকাল ধরে আল্লাহর সাথে ছিল, ভবিষ্যতে তা অনন্তকাল ধরে পরিবর্তনহীনভাবে বিরাজও করবে। সেই হিসাবে, কুরানের কোন আয়াত কখন কিভাবে নাজিল হয়েছে সেই কন্টেক্সট হিসাব করা গুরুত্বপূর্ণ না, বরং কুরানে লিটারালি যা বলা আছে তাই ডিভাইন আইন। অন্যদিকে মুতাজিলাদের মতামত গ্রহন করলে, কুরান ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে নবী মুহাম্মদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে। মুহাম্মদ এইখানে একজন নিরপেক্ষ বর্ণনাকারী মাত্র নয় বরং তার জীবনের নানা ধর্মতাত্ত্বিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম ও সংকটের প্রেক্ষিতে এসব আয়াত নাজিল হয়েছে। সেই হিসাবে, কুরানের আয়াতকে এর কন্টেক্সট অনুসারে বিচার করেই তার অর্থ বুঝা উচিৎ। মুতাজিলাদের প্রতিদ্বন্দী আশারিয়া ধর্মতাত্ত্বিকরা মুতাজিলাদের সাথে এই বিষয়ে পুরোপুরি একমত না হলেও একেবারে ভিন্নমত ছিলেন না। তারা একি সাথে ডিভাইন কুরানের অস্তিত্ব মানতেন, আবার বাস্তব কুরানকে ইতিহাসের ভেতরকার কাগজ ও কালির কুরান বলেই গন্য করতেন। কিন্তু কুরান বিষয়ে এই ধরণের ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের পুরোপুরি বিরুদ্ধে ছিলেন ইমাম হাম্বল। তার মতে কুরান কোন যুক্তি তর্ক অথবা ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় না।
খলিফা আল মামুন মুসলিম খলিফাদের মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাতদের একজন। তিনি বিদ্যানুরাগী ছিলেন, দর্শন ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষকদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য থেকে গ্রিক দর্শন ও বিজ্ঞানের বই যোগার করে অনুবাদের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু দিনশেষে তিনি ছিলেন একজন মধ্যযুগীয় সম্রাট। ইসলাম সম্বন্ধে তার নিজের বুঝটা তিনি আর সবার উপরে চাপিয়ে দিতে চাইলেন। কুরান ইতিহাসের একটি সময়ে সৃষ্টি হয়েছে, মুতাজিলাদের এই মতের কট্টর সমর্থক ছিলেন আল মামুন। এই মতের বিরোধীতা করায় তিনি ইমাম হাম্বলকে তার দরবারে ডেকে পাঠালেন। তারপর কি হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। হাম্বল সুবিচার পেয়েছেন কি না এবং তাকে ঠিক কি ধরণের শাস্তি দেয়া হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। কিন্তু জনগণের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পরে যে ইমাম হাম্বলকে শেকলে বেধে খলিফার দরবারে হাজির করা হয়েছে এবং কুরান সম্বন্ধে তার অবস্থান পরিবর্তন না করায় চাবুক দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করে জেলখানায় আটক করা হয়েছে। ফলে উলামা ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি সহিহ ইসলামের পক্ষে আপোষহীন একজন যোদ্ধা হিসাবে পরিচিতি পেয়ে গেলেন। ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্ককে গায়ের জোরে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে যে সমস্যার সমাধান হয় না, এই ইতিহাস তার প্রমান। গায়ের জোরে চাপিয়ে দেয়া মতামত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে নাও টিকতে পারে। খলিফা আল মুতাওয়াক্কিল ক্ষমতায় আসার পর উলামাদের সাথে একধরণের সমঝোতায় যান এবং মুতাজিলারা দরবারি অবস্থান হারিয়ে ফেলে। ফলে কুরান বিষয়ে তাদের মতামতের শ্রেষ্ঠত্বও আর থাকে নাই। এবং কুরান ও ইতিহাসের মধ্যকার সম্পর্কের এই বিতর্কটিরও কোন সমাধান হয় নাই। দরবারি আনুকূল্য হারানোর অনেকদিন পর পর্যন্ত মুতাজিলারা টিকে থাকলেও তেরো শতকে ক্রুসেডার এবং মোঙ্গলদের আক্রমনের সময়টায় তারা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সময় আবির্ভাব ঘটে সালাফি ইসলামের আরেক শায়েখ, ইবনে তাইমিয়ার। তাইমিয়া ছিলেন একজন হাম্বলিবাদী। তার হাত ধরেই ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষন বিরোধী এবং কুরানের লিটারাল ব্যাখ্যার পক্ষের সালাফি ইসলাম বিকোশিত হয়ে ওঠে। পাশাপাশি কুরান হাদিস ব্যবহার করে আক্রমনকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদী ইসলামের মতাদর্শ প্রচারও এই ধারার ইসলাম ব্যাখ্যায় তাইমিয়ার হাত ধরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি ‘ইবনে তাইমিয়ার ঢিলা স্ক্রু ও সালাফিদের উত্থানের ইতিহাস’ নামক ব্লগে। আধুনিক কালে, এই মত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সৌদী রাজবংশের ধর্মীয় গুরু আবদুল ওয়াহাবের মাধ্যমে, যিনি হাম্বল এবং তাইমিয়ার ইসলামকেই সহিহ ইসলাম বলে গন্য করেছেন।
অবশ্য মুতাজিলাদের পতনের পরও তাদের চিন্তার সমাপ্তি ঘটে নাই। পরবর্তি যুগে এবং আধুনিক কালেও মুসলমানদের মধ্যে নানাভাবে মুতাজিলাদের বিভিন্ন চিন্তা টিকে আছে। বেশ কয়েকজন মুতাজিলা চিন্তাবীদ কুরানের তাফসির লিখেছিলেন। এরমধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত হলো বারো শতকে আল জামাখশারি লিখিত তাফসির ‘আল কাশশাফ’। এই তাফসিরে কুরান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঐতিহাসিক কন্টেক্সটের পাশাপাশি যুক্তি তর্ক এবং আরবী কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। মুতাজিলাদের পতনের দীর্ঘকাল পর পর্যন্ত এই তাফসিরটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। আধুনিক যুগের প্রাক্কালেও এই তাফসিরের প্রভাব বুঝা যায় সর্বশেষ ওসমানি (ottoman) তুর্কি খেলাফতের আমলে ‘আল কাশশাফে’র গুরুত্ব দেখে। ওসমানি খেলাফতের সময়ে আল কাশশাফের রিভিউ হিসাবে লেখা হয়েছে অন্ততপক্ষে দুইশ পুস্তক।
কিন্তু কুরান ইতিহাসের ভেতরকার না বাইরের বিষয়, এই বিতর্কের সমাধান না হওয়ায় যে সমস্যাটা হয়েছে তা আমাদের সময়ে মহা সংকটে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ সাধারণ মুসলমান এই বিতর্কের ইতিহাস জানেন না। কুরান সৃষ্ঠ না কি অসৃষ্ঠ এই বিতর্কটি উলামাদের কাছে স্পর্শকাতর হওয়ায় সালাফি বিরোধী উলামারাও সালাফিদের ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে শক্ত ভাবে দাঁড়াতে পারে নাই, তারা বরং বিতর্কটিকে ঢেকে রাখতেই পছন্দ করে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আয়াত সম্বন্ধে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন বটে কিন্তু ‘ধর্মতত্ত্ব’কে অস্বিকার করে সালাফিরা যেমন একটি শক্ত ধর্মতাত্ত্বিক পজিশন গ্রহণ করেছে, তার বিপরীতে তারা কোন একক শক্ত পজিশন ঠিক করতে পারে নাই। তাই আজকে যখন মডারেট, লিবারাল এবং ট্রাডিশনাল কিন্তু সালাফি বিরোধী মুসলমানরা আইসিসকে এবং আইসিসের ইসলামকে খারিজ করছে, তখন তাদের মতামত অমুসলিমদের কাছে এবং ইসলামোফোবদের বিরুদ্ধে শক্ত ভাবে হাজির করতে পারছেন না। বারো শতকেই যদি ইসলামী ধর্মতত্ত্বের বিকাশ বন্ধ না হয়ে যেতো, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো। সেইক্ষেত্রে হয়তো কুরানের কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা আধুনিক সময়ে করতেন সমাজ বিজ্ঞানীরা, আর সেই ব্যাখ্যাই সাধারণ মুসলমানদের কাছে সহিহ বলে গন্য হতো। কিন্তু ইতিহাস তো আর পাল্টানোর উপায় নাই।
ইতিহাস পালটানো না গেলেও ভবিষ্যত নির্মান করার সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায় নাই। বর্তমানের সংকট মোকাবেলায় এই বিতর্কের দিকে মুসলমানরা দৃষ্টি দেবেন সেই প্রত্যাশা করি। আমাদের জন্যে আশার বিষয় যে, এই বিতর্ক সম্বন্ধে জেনে অথবা না জেনেও কুরানের কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা মুসলমানরা ঠিকই করে যাচ্ছেন। আধুনিক ইসলামী পন্ডিতদের মধ্যে ফজলুর রহমানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার পিতা ছিলেন দেওবন্দে পড়ালেখা করা আলেম। ফজলুর রহমান পড়াশোনা করেছেন পাশ্চাত্যের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুই জায়গাতেই ইসলাম সম্বন্ধে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। কুরানের যে আয়াতটিতে পুরুষকে নারীর উপর অধিকার দেয়া হয়েছে, তার পরের আয়াতটিকে গুরুত্ব দিয়ে ফজলুর রহমান দাবি করেছিলেন যে পুরুষের এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্থনীতির দিক থেকে ফাংশনাল শ্রেষ্ঠত্ব, নারীর উপর পুরুষের কোন জন্মগত শ্রেষ্ঠত্ব নয়। অর্থাৎ, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক বাস্তবতা পরিবর্তিত হলে এই অধিকারের হায়ারিচি পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার দাবি রাখতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, হেফাজতের নারী নীতি বিরোধী আন্দোলনের সময় আমিও একিভাবে কুরানের এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছিলাম ইসলামের ভেতর থেকে হেফাজত বিরোধীতার ডিসকোর্স দাঁড় করানোর চেষ্টা থেকে। যেহেতু তখনো আমার ফজলুর রহমান পড়া হয় নাই তাই বলা যায় পাঠকদের পক্ষে ইন্ডিপিন্ডেন্টলি এইসব কন্টেক্সট আবিস্কার করা সম্ভব। বাংলা অনলাইন দুনিয়ায় এই মুহুর্তে ইসলাম, আইসিস ও কুরানের ব্যাখ্যা নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তার ধারাবাহিকতায় ফেসবুকের জনপ্রিয় লেখক জিয়া হাসান একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন দেখলাম। সেখানে তিনি বিল মাহের, স্যাম হ্যারিস এবং আইসিসের ইসলাম ব্যাখ্যার বিপরীতে গিয়ে কুরানের কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা করেছেন। সুরা আনফালের যে আয়াত ব্যবহার করে সালাফিস্ট টেরোরিস্টরা এবং স্যাম হ্যারিস ও অভিজিৎ রায়ের মতো সেকুলাররা সন্ত্রাসীদের ইসলামকেই সহিহ ইসলাম বলে প্রচার করছেন, জিয়া হাসান সেই আয়াতকে বদর যুদ্ধের ইতিহাসের কন্টেক্সটে ব্যাখ্যা করেছেন। এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারন জিয়া হাসান অনলাইনে একজন জনপ্রিয় লেখক, বিশেষ করে আস্তিক ও মুসলমানদের মধ্যে। আমি দেখেছি, জিয়া হাসানের লেখাটিতে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররাও লাইক দিয়েছেন। মুসলমানরা যদি এই ধরণের লেখালেখি বৃদ্ধি করেন, তাহলে কওমি মাদ্রাসার বহু ছাত্র ক্রমবর্ধমান টেরোরিজমের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্ত করতে সক্ষম হবে। আমরা নিশ্চয় টেরোরিস্টদের ইসলামই সহিহ ইসলাম বলে প্রচার করে কওমি মাদ্রসার ছাত্রদেরকে টেরোরিস্ট হতে প্ররোচিত করতে পারি না। ঐটা সালাফিস্ট ইসলামিস্ট এবং সালাফিস্ট সেকুলারিস্টদের কাজ। (চলবে)
(এক লেখায় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব না, তাই চলবে দিয়ে রাখলাম। তবে দ্বিতীয় পর্ব অতি সত্ত্বর লিখবো না। তার আগে গেম অফ ইসলামিক থ্রোন সিরিজটা শেষ করবো)
অসাধারণ। আমি পড়ছি আর আমার
অসাধারণ। আমি পড়ছি আর আমার সামনে থেকে একটা একটা করে কাল পর্দা সরে যাচ্ছে। আমি যেন এক নতুন যুগের নতুন সত্যের সন্ধান পাচ্ছি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আমার অজ্ঞতা দূর করতে সাহায্য করার জন্য। আমি আপনার এই লেখাটা আজীবন মনে রাখবো। এই লেখাটি এতোটা উন্নত মনে হয়েছে যে আমার ভাল লাগার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আপনাকে ধন্যবাদ।
দারুন দারুন সব তথ্য ও ইতিহাস
দারুন দারুন সব তথ্য ও ইতিহাস জানতে পারছি। চলতে থাকুক আপনার কি-বোর্ড।
আমি আপনার লেখাগুলো খুবই আগ্রহ
আমি আপনার লেখাগুলো খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। আশাকরি এই সিরিজটিও বাংলা অনলাইনকে সমৃদ্ধ করবে। পুরোটা না পড়ে একেবারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার পক্ষে আমি না। তবে ইসলামের ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানতে পারছি গুছানোভাবে। এইগুলো জানতে হলে আমাকে অনেক বই ঘাটাঘাটি করতে হত। এই সিরিজের সবগুলো পড়ে তারপর মুল্যায়ন করা যাবে। দিনশেষে আমরা কিন্তু সবাই যার যার বিশ্বাস বা অবিশ্বাস নিয়েই ঘুমাইতে যাই।
আপনার সিরিজগুলো চলুক।
সহমত, চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
সহমত, চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। চালিয়ে যান।
আপনার পোষ্টগুলো দূর্দান্ত।
দারুন বিশ্লেষন। শেয়ার দিলাম।
দারুন বিশ্লেষন। শেয়ার দিলাম।
লেখক বলেছেন কুর’আনের
লেখক বলেছেন কুর’আনের কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা করতে হবে। ভাল কথা। মুতা বিয়ে, মেয়েদের উপর ছেলেদের কর্তৃত্ব, সম্পদ বন্টনে ছেলে-মেয়ের ভেতরে বৈষ্ম্য — ইত্যাদি বিষয়ে কন্টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা করতে হলে তো পুরো কিতাবটাই বদলাইতে হবে।
সেই সাথে এই কথাও মনে তাখা প্রয়োজন যে, কুর’আন শেষ নবীর হাত ধরেই এসেছিল। তাই এর প্রয়োগ ও বাস্তবতা জগতের শেষদিন পর্যন্ত থাকাটাই আবশ্যিক। তা না হলে কুর’আন যে আল্লাহর বাণী, তা প্রমাণিত হবে না। বরঞ্চ, টেক্সচুয়াল ব্যাখ্যা করলে কুর’আনের সেই সার্বজনন অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যায়। আশা করি লেখক এই দিকেও একটু খেয়াল করবেন।
ইতিহাসের কিছু নাম ধাম লিখে
ইতিহাসের কিছু নাম ধাম লিখে বাগাড়ম্বর করে গেলেন। এ যেন সেই পুরানো চেষ্টা, চকচকে মোড়কে বিষ গেলানোর চেষ্টা। লেখকের কাছে একটি সহজ আয়াতের কন্টেক্সটচুয়াল ব্যাখা চাই।
সূরা ফাতিহা। সবাই জানেন। এর ইংরেজি বা বাংলা বিভিন্ন ভার্সন কোন পার্থক্য নাই বলেই মনে হল। এখন আমার জানতে ইচ্ছা
করছে এই “আমরা” টা কে ??? আমরা যদি কোন 3rd person হয় তাহলে এই বাণীর ব্যাখ্যা জানতে চাই।
আমারও জানার ইচ্ছে, এই আমরাটা
আমারও জানার ইচ্ছে, এই আমরাটা কে?
পারভেজ বরাবরের মতই চমৎকার
পারভেজ বরাবরের মতই চমৎকার লেখা হয়েছে। আপনার লেখায় অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে যে, জগতে যে সকল মানুষ নিজেদেরকে মুসলমান এবং ইসলামের অনুসারী বলে দাবী করেন, তাদের সকলেই মুসলমান বা ইসলামের অনুসারী নন। তাদের কেউ কেউ মুসলমান ও ইসলামের অনুসারী। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত টি কে নেবে? আপনি? নাকি আপনার বর্ণিত পণ্ডিতগণ?
সুরা নিসার সেই আয়াত এর শুধু প্রথম লাইন টাই কি ফজলুর রহমান সাহেব ব্যাক্ষ্যা করেছিলেন? বাকি আয়াতগুলো কি ব্যাক্ষ্যা করার সময় পান নাই তিনি? নাকি আপনি চেপে গেলেন? মানে সেই যে কাদের কে বিবাহ করা যাবে, কখন নারীকে প্রহার করা যাবে (অবশ্য আপনাদের ভাষায় বলতে হবে “ম্রিদু প্রহার”), ডান হাত যাঁদের কে অধিকৃত করে তাদেরকে বিয়ে করা বিষয়ে যে সমস্ত আয়াত আছে …… এসব বিষয়ে কি ফজলুর রহমান সাহেব কিছু বলেছিলেন? উনার লেখার কোনও লিঙ্ক আছে? কিম্বা বইয়ের নাম? যদি দয়া করে দিতেন, তাহলে নিজেকে খানিকটা “সালাফি” প্রভাব মুক্ত করার চেষ্টা করতাম। দেবেন?
যেহেতু পৃথিবীর অর্থনৈতিক “কন্টেক্সট” বদলে গেছে, তাই এখন কি কুরআনের ওই আয়াত টি পুনরলিখন করা যেতে পারে? এবং যে সমস্ত এলাকায় বা পরিবারে, নারী প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিমান মানুষ, তারা কি তাহলে এখন সুরা নিসা তে বর্ণিত “পুরুষ” এর স্থান টি পেতে পারে?
এই সকল প্রশ্ন শুধুই, খানিকটা জ্ঞান লাভের জন্যে। সততার সাথে বলছি, ইসলামের ইতিহাস নিয়ে আমার আপনার মতো করে পড়াশুনা নেই।
ধন্যবাদ চমৎকার লেখাটির জন্যে। পরবর্তী সংখ্যার জন্যে অপেক্ষা করবো।
দুর্দান্ত একটা সিরিজ শুরু
দুর্দান্ত একটা সিরিজ শুরু হয়েছে। বাকিটুকু পড়বার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।