Author: শিশু পাল
নীলিমার এক দিন
“এই নিমো, তোর কি মনে হয় মরে যাওয়াটা খুব ভয়ের?” – “শোন উজান, আমি তো এখনো বেঁচে আছি, তাই মৃত্যুভয়ের কথা বলতে পারিনা। তবে তোমাকে যে আমার মাঝে মধ্যে ভীষণই ভয় লাগে, সেটা জানো কি?” সরোবরের এই নিঃসঙ্গ প্রাঙ্গনটা যেন হঠাৎই এক ফ্যাকাশে অথচ মেদুর হাসির সঙ্গ পেয়ে চঞ্চল হয়ে…
আমি সস্তার এক মানুষ বলছি
আমি এখন আর মানুষ নেই, আমি এখন কেবলই খাদ্য! আমাকে খাওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়তই; কিছুটা মাথা, কিছুটা বুক, কিছুটা হাত, কিছুটা পা : গায়ের চামড়া হয়তো ঠিক আগের মতোই মসৃণ আছে, তবে যদি ওই চামড়া টান মেরে ছিড়ে ফেলো হয়তো, হয়তো তোমারও চোখে পড়বে; ছড়ানো ছেটানো সব তীক্ষ্ণ আঁচড়ের দগদগে ঘা।…
শহুরে মেয়ের ইতিকথা
“বাবান, ঠাম্মা ফোন করেছে! আয়, একটু কথা বলে যা”, তিন্নির মা ডেকে ওঠে। “ব্যস্ত আছি মা, ঠাম্মা কে বলো আমি বাইরে গেছি, পরে কোনোদিন কথা বলবো।” বিছানায় বসে অঙ্ক করছিল তিন্নি। পাশের ঘরে বাবা ঠাম্মার সাথে কথা বলছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। এতবার ডাকার পরেও সে ফোন না ধরায় মা আর…
ভালোবেসে যদি সুখ নাহি
সময়টা ছিল দুর্গাপুজোর আর গল্পটা, দুই প্রেমিক মানুষের। নাঃ, তারা একে অপরের প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল না ঠিকই, তবে তাদের হাড়ে-মজ্জায়-মস্তিষ্কে ভালোবাসতে পারার গুণটা ছিল ১৬ আনা খাঁটি। দিনটা বোধহয় ছিল নবমীর। ৯-১০ মাস আগে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব তখন একেবারে চরম পর্যায়! কোথায় সেই আড়ষ্ঠতা? কোথায় সেই লজ্জা-লজ্জা ভাব? মনে আছে, এক…
ইচ্ছেপূরণ
মিনির বয়স তখন কতই বা আর হবে, আট কিংবা নয়। নববর্ষের দিন বাবার সাথে ঘুরতে গিয়ে মিনি যখন জেদ ধরল যে তার খেলনার দোকানের সবচেয়ে বড় পুতুলটা চাই, তখন স্বরূপবাবু একটু ধমক দেওয়ার সুরেই বললেন, “মিনি, বাইরে বেরোলেই এমন বায়না করার অভ্যাসটা না ছাড়লে কিন্তু এবার আমি খুব বকবো। এইতো…
মজুর বইছে জ্ঞানের ভার, শিক্ষিতরা চুলোয় যাক!
লেখাটা শুরু কিভাবে করা উচিত বুঝতে পারছিনা৷ মনটা আজ সত্যিই ভারাক্রান্ত। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, আমি সদ্য মাধ্যমিক পাস করে ক্লাস ১১এ উঠেছি৷ গত এগারো বছর একই বিদ্যালয়ে সব চেনা মুখের মধ্যে দিন কাটিয়ে, শিক্ষা গ্রহণ করার পর আজ প্রথম এক নতুন, অচেনা অজানা ‘বিল্ডিং’ এ ঢুকলাম যা কিনা আমার…
ওরা বেঁচে আছে, ওরা উড়ছে!
আমি সেই সমস্ত নিষিদ্ধ প্রেমে বিশ্বাসী, যারা গভীর রাতে আর্তনাদে গলা ফাটায় আমি সেই সমস্ত অবরুদ্ধ আবেগগুলোকে কাছে টেনে নিই বারবার! যারা কড়া নেড়ে ফিরে গেছে সবে হতাশা-গ্লানির মৃত কারাগারে, নিহত যারা কত শতবার; ব্যর্থতার ক্রন্দনে যারা ঘুরে ফিরে একাকী, সবশেষে মরে যায় অবসাদে। ত্যাজ্য যারা! নক্ষত্রের মাঝে, আলোর মায়ায়…
রাণী আছে, রাজ্য কই?
“আরে ধর ধর ধর! মেয়েটা পরে গেল যে! হঠাৎ হলটা কি!”, সুভাষিণী ম্যাডামের আর্তস্বরে সম্বিৎ ফিরলো পাশের রুমে বসে থাকা শ্রাবনবাবুর। শ্রাবনবাবু, অর্থাৎ শ্রাবণ ভট্টাচার্য, বাংলায় পি.এইচ.ডি. করেও এক বেনামি সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি কিনা চিরকালের আনমনা ও ভবঘুরে,এতক্ষন বাইরের জানালার দিকে তাকিয়ে বসন্তের সোনালী রৌদ্রের ঔজ্জলতায় উত্তপ্ত কালচে…
রিভিউ – নির্বাসিত লেখক’কে
এই বইটির রিভিউ দেওয়ার প্রসঙ্গে কোনো কিছু লেখার আগে যেটা বলা আমার কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয়, তা হল “তসলিমা নাসরিন” নামটা আমার হৃদয়ে শুধুমাত্র একজন লেখকের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে না, তুলে ধরে এক আদর্শের প্রতীককে। কয়েক বছর আগেও তার নাম অব্দি আমার জানা ছিল না, হয়তো ছোট ছিলাম…
কু ঝিক ঝিক